ঢাকা,বুধবার, ৮ মে ২০২৪

শহর-শহরতলীর ৪০ স্পটের অচল সিসি ক্যামেরা

কক্সবাজার শহরে আশংকাজনকহারেই বেড়েছে ছিনতাই

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের পর কক্সবাজার জেলার জনসংখ্যা দেড় গুণে উন্নীত হয়েছে। আর শহর ও শহরতলীর জনসংখ্যা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চুরি–ছিনতাই। পুলিশের হিসাবেই গত চার বছরে কক্সবাজার শহরে ছিনতাই বেড়েছে ৭ গুণ। শহর ও শহরতলীর ৪০ স্পটে পুলিশের স্থাপন করা সিসি ক্যামেরাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকায় অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।ফলে কক্সবাজার শহরে আশংকাজনকহারে বেড়েই চলেছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা।

শহরবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক মাসে দেশের প্রধান এই পর্যটন শহরে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, খুন–খারাবীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এমনকি পবিত্র রমজান মাসেও ক্ষান্ত নেই। বরং এ সব অপরাধীর পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে শহরে। গত ১৩ এপ্রিল রাতে শহরের বাসটার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন আবুল কালাম (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী। চলতি মাসে শহর ও শহরের আশপাশে খুন হয়েছেন পাঁচজন। ঘটেছে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনাও। ব্যবসায়ীরা পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরের বাসটার্মিনাল থেকে বিজিবি ক্যাম্প, সাবমেরিন কেবল স্টেশন থেকে আলীর জাঁহাল, রুমালিয়াছড়া, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, গোলদীঘি, কোর্ট বিল্ডিং এলাকা, সার্কিট হাউস রোড, উত্তরণ ও জেলগেট এলাকাসহ মূল শহরের অন্তত ১১টি স্পটে প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী ও ডায়াবেটিক পয়েন্টেও পর্যটক ও পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। কয়েক মাস আগে সুগন্ধা এলাকায় এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। ৫ মাস আগে শহরতলীর লিংকরোডে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম সিকদার। তবে বেশিরভাগ অপরাধের ক্ষেত্রেই অপরাধী শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।

পুলিশের হিসাব মতে, কক্সবাজার শহরে চার বছরে ছিনতাই বেড়েছে ৭ গুণ! কক্সবাজার শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৮টি এবং ২০২০ সালে ২৯টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। আর ২০২১ সালের এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩টিতে।

তবে গত কয়েক মাসের অবস্থা আরো উদ্বেগজনক বলে মনে করেন জেলা দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

তিনি পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে আইন শৃক্সখলা বাহিনীর টহল জোরদারের দাবি জানান।

তবে শহরে ছিনতাইকারী নির্মূলে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন। তিনি জানান, শহরে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীর সংখ্যা ১১৭ জন। এর মধ্যে গত এক মাসে সন্ত্রাসী মুন্না বাহিনীর প্রধানসহ ৬০জনের মতো ধরা পড়েছে। তাদের কাছ থেকে ৩৫–৪০টি ছোরা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

কক্সবাজারে চুরি–ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের উদ্যোগে শহর ও শহরতলীর ৪০টি স্পটে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা স্থাপন করা হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। পর্যটন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলের চাঁদায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা স্থানগুলো হলো– বাসটার্মিনাল পুলিশ বক্স ও সিএনজি পাম্প, কক্সবাজার কারাগার, স্টেডিয়ামের সামনে ও মোহাজের পাড়ার মোড়, সদর হাসপাতালের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের মোড়, জেলা শিক্ষা অফিসের সামনে ( সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়), গোলদীঘির পাড়ের দক্ষিণ মোড়, অগগমেধা ক্যাং (বৌদ্ধ মন্দির সড়ক), বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের উত্তর মোড়, বড় বাজার সামনে মোড় (বাজারঘাটা), ভোলাবাবুর পেট্রল পাম্প, লালদীঘির পূর্ব পাড় মসজিদের সামনে, পৌরসভার সামনে, ঘুনগাছ তলা (ফরেস্ট অফিস মোড়), বিমানবন্দর গেটের সামনে, ঝাউতলার হোটেল রেনেসার সামনের যাত্রী ছাউনিতে, হলিডের মোড়ের যাত্রী ছাউনীর সামনে ও পিটিআই স্কুলের সামনের মোড় (পিডিবির সামনে), আরআরআরসি অফিসের সামনে (বাণিজ্য মেলার মাঠ), লাবণীর মোড়ের যাত্রী ছাউনী, কল্লোল মোড়, হান্ডি রেস্টুরেন্টের মোড়, সী ইন পয়েন্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, সুগন্ধার মোড় ( ড্রাগন মার্কেটের সামনে), কলাতলীর পেছনের মোড় (সী ক্রাউনের সামনে), কলাতলীর মোড়, হোটেল সী প্যালেসের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ, সুগন্ধা পয়েন্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স, লং বীচের পাশে ( মোহাম্মদীয়া হোটেল সামনের পশ্চিম পাশ), নিরিবিলি অর্কিডের এটিএম বুথের পাশে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে (কটেজ জোনের পাশে) জাম্বুর মোড়, গোলচত্বর মোড়ের দক্ষিণ পাশে (ইউএনএইচসিআরের পেছনের রাস্তা), পাসপোর্ট অফিসের সামনে, সার্কিট হাউস গেট, পুলিশ সুপার বাসভবনের সামনের মোড় ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে।

প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তৎকালীন পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন চকরিয়া নিউজকে জানান, কক্সবাজার পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অলিগলিসহ সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউপির লিংকরোড় পর্যন্ত দেড় শতাধিক স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। সিসি ক্যামেরার কারণে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অপরাধী অপরাধের অন্ধকার পথ ছেড়ে দেবে।

তবে চার বছর আগে স্থাপন করা এসব সিসি ক্যামেরার মধ্যে বাজারঘাটার ৩–৪টি ক্যামেরা ছাড়া বাকীগুলো অনেক আগে থেকেই অচল রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শহরে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে অধিকাংশ সিসিটিভি অচল হয়ে পড়ায় অপরাধীদের শনাক্তে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। শহরের চল্লিশটি স্পটের মধ্যে এখন কেবল বাজারঘাটা এলাকার কয়েকটি ক্যামেরা সচল রয়েছে। তবে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম অপরাধীদের শনাক্তে আলাদাভাবে কাজ করছে।

পাঠকের মতামত: